Apply Online for Labour Card 2025 (E-Shram Card)


ভারতের শ্রমিক শ্রেণী দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত স্তম্ভ। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের চিনাক্ত করা, নিবন্ধন করা এবং সহায়তা দেওয়ার জন্য ভারত সরকার ই-শ্রম কার্ড (Labour Card) চালু করেছে। ২০২৫ সালে, Labour Card-এর জন্য আবেদন করা আগের তুলনায় অনেক সহজ এবং সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, যার ফলে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প এবং আর্থিক সহায়তার সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন।

🔍 ই-শ্রম কার্ড কী?

ই-শ্রম কার্ড একটি বিশেষ পরিচয়পত্র যা ভারত সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক দ্বারা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের প্রদান করা হয়। এই কার্ডটি একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত তথ্য সংরক্ষণ করে। নিবন্ধনের পরে, শ্রমিকরা একটি ১২-অঙ্কের ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN) পান, যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প এবং কর্মসংস্থান সহায়তা কর্মসূচির সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

🎯 Labour Card 2025-এর উদ্দেশ্য

ই-শ্রম উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য একটি বিস্তৃত জাতীয় ডেটাবেস (NDUW) তৈরি করা। এর মাধ্যমে সরকার এই শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং নজরদারিতে সাহায্য পায়, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির মতো জরুরি অবস্থায়।

👷‍♂️ ২০২৫-এ কারা ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন?

১৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সের যেকোনো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক Labour Card-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। উপযুক্ত বিভাগগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • নির্মাণ শ্রমিক
  • ফুটপাথ বিক্রেতা
  • গৃহকর্মী
  • রিকশাচালক
  • আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী
  • কৃষি শ্রমিক
  • অভিবাসী শ্রমিক
  • বিড়ি শ্রমিক
  • মাছ ধরার শ্রমিক
  • গৃহভিত্তিক ও স্বনিযুক্ত শ্রমিক

📋 ই-শ্রম কার্ড ২০২৫-এর জন্য যোগ্যতা মানদণ্ড

  • আবেদনকারীকে ভারতের নাগরিক হতে হবে
  • বয়স ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে হতে হবে
  • EPFO/ESIC সদস্য বা করদাতা হওয়া চলবে না
  • অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকা আবশ্যক

📑 Labour Card-এর জন্য প্রয়োজনীয় নথি

  • আধার কার্ড
  • ব্যাংক পাসবুক বা অ্যাকাউন্টের তথ্য
  • আধারের সাথে যুক্ত মোবাইল নম্বর
  • পেশাগত সংক্রান্ত তথ্য
  • ঠিকানার প্রমাণ (যদি আধারে উল্লিখিত না থাকে)

💡 ই-শ্রম কার্ডের মূল বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা

Labour Card-এর জন্য নিবন্ধন করলে নিম্নলিখিত সুবিধা পাওয়া যায়:

  • সারা ভারতে বৈধ ১২-অঙ্কের ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN)
  • PMSBY প্রকল্পের অধীনে ₹২ লক্ষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমা কভারেজ
  • বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প ও ভর্তুকির সুবিধা
  • জরুরি অবস্থা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা
  • চাকরি সহায়তা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ডেটাবেস
  • পেনশন, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, গৃহনির্মাণ প্রকল্পের দ্রুত সুবিধা

🖥️ Labour Card-এর জন্য অনলাইনে আবেদন কীভাবে করবেন (Step-by-Step)

২০২৫-এ ই-শ্রম কার্ডের জন্য অনলাইন আবেদন করা খুবই সহজ এবং মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। আধারের সাথে যুক্ত মোবাইল নম্বর এবং প্রয়োজনীয় নথির মাধ্যমে আপনি নিজেই আবেদন করতে পারেন। নিচে পুরো প্রক্রিয়া দেওয়া হল:

  1. সরকারি পোর্টালে যান: নিচের বোতামে ক্লিক করে অথবা https://eshram.gov.in টাইপ করে ওয়েবসাইটে যান।
  2. “Register on E-Shram” অপশন বেছে নিন: হোমপেজে লগইন সেকশনের অধীনে “Register on E-Shram” ক্লিক করুন।
  3. আধার যুক্ত মোবাইল নম্বর দিন: আপনার আধার যুক্ত মোবাইল নম্বর ও ক্যাপচা কোড লিখুন।
  4. OTP গ্রহণ করুন ও লিখুন: “Send OTP” ক্লিক করুন এবং প্রাপ্ত ৬-সংখ্যার OTP দিন।
  5. আধার তথ্য দিন: আপনার আধার নম্বর লিখুন এবং ডেটা শেয়ার করার সম্মতি দিন।
  6. ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন: যেমন নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ঠিকানা ইত্যাদি।
  7. পেশাগত তথ্য যুক্ত করুন: আপনার বিভাগ ও কাজের ধরণ নির্বাচন করুন (যেমন নির্মাণ শ্রমিক, বিক্রেতা, গৃহ সহায়ক ইত্যাদি)।
  8. শিক্ষাগত ও দক্ষতা সংক্রান্ত তথ্য দিন: শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কারিগরি দক্ষতা নির্বাচন করুন।
  9. ব্যাংক তথ্য দিন: অ্যাকাউন্ট নম্বর, IFSC কোড ও শাখার নাম লিখুন (DBT-এর জন্য)।
  10. ছবি আপলোড করুন (যদি প্রয়োজন হয়): কিছু ক্ষেত্রে ছবি আপলোডের প্রয়োজন হতে পারে।
  11. ফর্ম জমা দিন: সব তথ্য যাচাই করুন এবং ফর্ম সাবমিট করুন।
  12. ই-শ্রম কার্ড ডাউনলোড করুন: সফল নিবন্ধনের পরে, আপনি একটি ১২-অঙ্কের UAN পাবেন। আপনি সাথে সাথেই ডিজিটাল Labour Card ডাউনলোড করতে পারবেন।

আবেদন করার আগে নিশ্চিত করুন যে আপনার মোবাইল নম্বরটি আধারের সাথে লিংক করা আছে, কারণ নিবন্ধনের সময় OTP যাচাইকরণ প্রয়োজনীয়। যদি আপনার নম্বর লিংক না থাকে, তবে অনুগ্রহ করে নিকটস্থ আধার সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সেটি আপডেট করুন।

🏢 Labour Card-এর জন্য অফলাইন আবেদন কীভাবে করবেন (CSC কেন্দ্র)

যদি আপনি অনলাইনে আবেদন করতে না পারেন, তাহলে আপনার নিকটস্থ কমন সার্ভিস সেন্টার (CSC)-এ গিয়ে আবেদন করতে পারেন:

  1. আপনার আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্কের তথ্য সাথে নিন
  2. আপনার মোবাইল নম্বর এবং পেশার তথ্য দিন
  3. CSC অপারেটর আপনার হয়ে আবেদনপত্র পূরণ করবে
  4. যাচাইকরণের পর আপনি আপনার ই-শ্রম কার্ড পাবেন

📲 ই-শ্রম কার্ড PDF অনলাইনে কীভাবে ডাউনলোড করবেন

  1. https://eshram.gov.in ওয়েবসাইটে যান
  2. “Update Profile / Download UAN Card”-এ ক্লিক করুন
  3. নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর এবং OTP ব্যবহার করে লগইন করুন
  4. “Download UAN Card”-এ ক্লিক করুন
  5. আপনার ই-শ্রম কার্ড PDF ফর্ম্যাটে ডাউনলোড হয়ে যাবে

🔄 Labour Card-এর তথ্য কীভাবে আপডেট করবেন

আপনার মোবাইল নম্বর, ঠিকানা, পেশা বা ব্যাঙ্কের তথ্য আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে যেকোনো সময় আপডেট করতে পারেন:

  1. আধিকারিক ই-শ্রম পোর্টালে যান
  2. “Update Profile”-এ ক্লিক করুন
  3. মোবাইল নম্বর এবং OTP দিয়ে লগইন করুন
  4. প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করুন এবং সংরক্ষণ করুন

📌 Labour Card-এর স্ট্যাটাস কীভাবে চেক করবেন

আপনার Labour Card সক্রিয় আছে কি না তা জানতে:

  1. eshram.gov.in ওয়েবসাইটে যান
  2. “Update Profile / Download UAN Card”-এ ক্লিক করুন
  3. লগইন করে আপনার নিবন্ধন স্ট্যাটাস দেখুন

💳 ই-শ্রম কার্ডের বৈধতা ও নবীকরণ

২০২৫ সালে ইস্যু হওয়া ই-শ্রম কার্ড অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৈধ থাকে। তবে সরকারী সুবিধাগুলো পেতে হলে আপনার তথ্য সময়ে সময়ে আপডেট রাখা সুপারিশ করা হয়।

📈 ই-শ্রম কার্ডের মাধ্যমে শ্রমিক কল্যাণে প্রভাব

ই-শ্রম কার্ড চালু হওয়ার পর থেকে অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এটি বিভিন্ন সাহায্য প্যাকেজ, বীমা সুবিধা এবং চাকরির সঙ্গে যুক্ত পরিষেবাগুলিকে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ২৮ কোটিরও বেশি নিবন্ধনের মাধ্যমে, ই-শ্রম পোর্টাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

📞 ই-শ্রম হেল্পলাইন ও সহায়তা

  • টোল-ফ্রি নম্বর: 14434
  • ইমেল: helpdesk.eshram@gov.in
  • সময়: সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা (সোমবার থেকে শনিবার)

❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. ই-শ্রম কার্ডের জন্য আবেদন করতে কি কোনো ফি লাগে?

না, ই-শ্রম কার্ডের আবেদন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

২. সরকারী বা বেসরকারি কর্মচারীরা কি আবেদন করতে পারেন?

না। শুধুমাত্র EPFO বা ESIC-এর আওতায় না থাকা অসংগঠিত খাতের শ্রমিকরাই আবেদন করতে পারেন।

৩. ই-শ্রম কার্ড কি বাধ্যতামূলক?

যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে ই-শ্রম কার্ড থাকলে আপনি বিভিন্ন সরকারী সুবিধা সহজেই পেতে পারেন।

৪. আধারের সঙ্গে লিংক না থাকা মোবাইল নম্বর দিয়ে কি নিবন্ধন করা যাবে?

না। নিবন্ধনের সময় OTP যাচাইকরণ আবশ্যক, তাই মোবাইল নম্বরটি আধারের সঙ্গে লিংক করা আবশ্যক।

৫. যদি আমার ই-শ্রম কার্ড হারিয়ে যায় তাহলে কী করবো?

আপনি নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে পোর্টালে লগইন করে আবার কার্ডটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

📝 উপসংহার

Labour Card 2025 বা ই-শ্রম কার্ড হল ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা অসংগঠিত খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে। আপনি যদি একজন শ্রমিক, স্বনিয়োজিত ব্যক্তি বা গৃহকর্মী হন, তাহলে এই কার্ডের মাধ্যমে আপনি সুরক্ষা, সহায়তা ও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। আজই আবেদন করুন এবং আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করুন।


এখনই E-Shram পোর্টালে আবেদন করুন